পৃষ্ঠাসমূহ

বাংলাদেশের গ্রামীন খেলাধুলা সমূহ(Bangladesh Rural Sport)

বিদেশী খেলাধুলার ভীড়ে আমরা নিজেদের সেই ঐতিহ্যবাহী খেলধুলা গুলোকে হারাতে বসেছি চলুন দেখে নেই বাংলাদেশর প্রাচীন সব খেলধুলা গুলো।

১. ইচিং বিচিং
সাধারণত এই খেলার জন্য শিশু ও কিশোরীরা গ্রাম সংলগ্ন সবুজ মাঠকে নির্বাচন করে। উচ্চতা অতিক্রম এই খেলার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।

এই খেলার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের মুখি উচ্চারিত হয়ঃ

 ‍"ইচিং বিচিং চিচিং চা
প্রজাপতি উড়ে যা"


খেলার নিয়মাবলীঃ
দু'জন খেলোয়াড় পাশাপাশি বসে খেলোয়াড়দের অতিক্রম করার জন্য উচ্চতা নির্মাণ করে দেয়। প্রথমে তারা দু'পায়ের গোড়ালি দিয়ে উচ্চতা নির্মাণ করে। খেলোয়াড়রা উচ্চতা অতিক্রম করার পর তারা পায়ের উপর আরেক পা তু্লে দিয়ে উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে পায়ের উপর প্রসারিত করতল স্থাপন করে উচ্চতা বাড়িয়ে তোলা হয়। উচ্চতা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়রা দুই পা মুক্ত করে ত্রিকোণাকার একটি সীমানা তৈরি করে। এই পায়ে ঘেরা স্থানটি পা তুলে দম দিতে দিতে বা ছড়া আওড়াতে আওড়াতে তিনবার অতিক্রম করে লাফ দিয়ে পার হতে হয়। এই সীমানা অতিক্রম করার পর বসে থাকা খেলোয়াড়দের যুক্ত পাকে প্রতিটি খেলোয়াড় শূন্যে লাফিয়ে ইচিং বিচিং ছড়া বলতে বলতে দুইবার করে অতিক্রম করে নেয়। এটিই খেলার শেষ পর্ব।


২. ওপেন টু বাইষ্কোপঃ
গ্রামীন খেলাধুলার মধ্যে অন্যতম । এর সরলতার কারণে মেয়েদের কাছে ওপেন টু বাইষ্কোপ খেলাটি আজ পর্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে । এটি একটি সহায়ক খেলা । গল গঠন করার জন্য এই খেলাটি খেলা হয় । এই খেলাটির সাএথ জড়িত ব্রিট্রিশ যুগের ইংরেজ সাহেবদের বিনোদনের প্রতি ইঙ্গিত করে ।

এই খেলার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের মুখি উচ্চারিত হয়ঃ

" ওপেন টু বাইষ্কোপ
নাইন টেন তেইশ কোপ
সুলতানা বিবিয়ানা
সাহেব বাবুর বৈঠাকখানা
সাবেহ বলেছে যেতে
পান সুপারি খেতে পানের আগায় মরিচ বাটা
স্প্রিংএর চাবি আঁটা
যার নাম মনিমালা
তাকে দেবো মুক্তার মালা ।"


খেলার নিয়ামাবলীঃ
দু'জন দলপতি ফুল অথবা ফলের নামে নিজেদের দলের নাম নির্বাচন করে। তারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দু'হাত দিয়ে একটি তোরণ নির্মাণ করে। খেলায় অংশগ্রহনকারী খেলোয়াড়রা পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে রেলগাড়ির মতো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছড়া বলতে বলতে এই তোরণের নীচ দিয়ে যাতায়াত করতে থাকে। ছড়া শেষ হবার মূহুর্তে যে খেলোয়াড় তোড়নের মধ্যে অবস্থান করে তাকে দলপতিরা হাতের মধ্যে বন্দী করে। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে সে কোন দলে যোগ দেবে। তখন সে তার পছন্দের দলে যোগ দেয়। এই ভাবে প্রতিটি খেলোয়াড় দুই দলে বিভক্ত হয়ে মূল খেলা শুরু করে। কখনো কখনো মূল খেলা হিসেবেই ওপেন টু বাইস্কোপ খেলাটি খেলা হয়ে থাকে।

৩.  কড়ি খেলাঃ
এটি আরেকটি বাংলাদেশের গ্রামীন খেলা । যে সব কৈশোর উত্তীর্ণ মেয়েদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত সাধারণত তারাই কড়ি বেশী খেলে থাকে। কড়ি পাঁচ গুটির মতই সমান জনপ্রিয় একিট খেলা । কড়ি হিসাবে খেজুরের বিটি দিয়ে কড়ি বানিয়ে গ্রামে খেলা হয়ে থাকে ।

এই খেলার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের মুখি উচ্চারিত হয়ঃ

"খুশুর খুশুর দুর্গা মাসুর
তিল তালিয়া মার কেলিয়া কুমড়ার চাক ধাপ্পা দিয়া
হাতের কড়ি হাতে থাক"


খেলার নিয়ামাবলীঃ
কড়ি খুবই সহজ ও সরল একটি খেলা। চারটি কড়ি কোনো মসৃণ স্থানে হাত থেকে গড়িয়ে দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় টোকা দিয়ে আঘাত করে পয়েন্ট সংগ্রহ করা হয়। আঘাত করতে ব্যর্থ হলে বা কড়ি চালার পর এক সাথে লেগে থাকলে ঐ খেলোয়াড়ের দান নষ্ট হয়ে যায় এবং অন্য জন খেলা শুরু করে। নিজের মাথার চুল দিয়ে গ্রামের মেয়েরা প্রায়ই আপাত স্পর্শ করে থাকা গুটিকে পৃথক প্রমাণ করে থাকে। কড়ি চালার পর যদি তিনটি গুটির বুক উপড়ে থাকে তবে ঐ দান নষ্ট হয় আর যদি চারটি গুটিই বুক উপড়ে থাকা অবস্থায় পড়ে তবে প্রতি গুটির জন্য চারটি করে পয়েন্ট পাওয়া যায় এবং এই গুটি সংগ্রহ করা নিয়ে খেলোয়াড়দের মাঝে কাড়াকাড়ি পড়ে যায়।

৪. কানামাছিঃ
গ্রমীণ খেলাধুলার মধ্যে কানামাছি একটি চমৱকার খেলা । এদেশের সর্বত্র শিশু কিশোররা এ খেলা খেলে থাকে ।

এই খেলার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের মুখি উচ্চারিত হয়ঃ 

"কানামাছি ভোঁ ভোঁ
যারে পাবি তারে ছো"



খেলার নিয়ামাবলীঃ
এ খেলায় কাপড় দিয়ে একজনের চোখ বেঁধে দেয়া হয়, সে অন্য বন্ধুদের ধরতে চেষ্টা করে । যার চোখ বাঁধা হয় সে হয় 'কানা' । অন্যরা 'মাছি'র মতো তার চারদিক ঘিরে কানামাছি ছড়া বলতে বলতে তার গায়ে টোকা দেয় । চোখ বাঁধা অবস্থায় সে অন্যদের ধরার চেষ্টা করে । সে যদি কাউকে ধরতে পারে এবং বলতে পারে তার নাম তবে ধৃত ব্যক্তিকে কানামাছি সাজতে হয় ।


 ৫. বাডুডু বা কাবাডিঃ
বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে কাবাডি আন্তর্জাতিক ভাবেও খেলা হয়। এই খেলা সাধারণত কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সব ধরনের ছেলেরা খেলে থাকে। সাধারণত বিশেষ উৎসব বা পালা-পার্বনে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হয়। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। পূর্বে কেবল মাত্র গ্রামে এই কাবাডি খেলার প্রচলন দেখা গেলেও বর্তমানে সব জায়গায় কাবাডি খেলা প্রচলিত হয়েছে।


খেলার নিয়মাবলীঃ
  • মাঠঃ কাবাডি খেলার বালকদের মাঠ লম্বায় ১২.৫০ মিটার চওড়ায় ১০ মিটার হয়। এবং বালিকাদের কাবাডি খেলার মাঠ লম্বায় ১১ মিটার এবং চওড়ায় ৮ মিটার হয়। খেলার মাঠের ঠিক মাঝখানে একটি লাইন টানা থাকে যাকে মধ্যরেখা বা চড়াই লাইন বলে। এই মধ্য রেখার দুই দিকে দুই অর্ধে দুটি লাইন টানা হয় যাকে কোল লাইন বলে। মৃত বা আউট খেলোয়াড়দের জন্য মাঠের দুই পাশে ১ মিটার দূরে দুটি লাইন থাকে যাকে লবি বলা হয়।
  • সদস্যঃ প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় অংশ নেয়। কিন্তু প্রতি দলের ৭ জন খেলোয়াড় একসাথে মাঠে নামে। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। খেলা চলাকালীন সর্বাধিক তিন জন খেলোয়াড় পরিব্রর্তন করা যাবে।
  • সময়ঃ ৫ মিনিট বিরতি সহ দুই অর্ধে পুরুষদের ২৫ মিনিট করে এবং মেয়েদের ২০ মিনিট করে খেলা হবে। খেলা শেষে যেই দল বেশী পয়েন্ট পাবে সাই দলই জয়ী হবে। দুদলের পয়েন্ট সমান হলে দুঅর্ধে আরও ৫ মিনিট করে খেলা হবে। এরপরেও যদি পয়েন্ট সমান থাকে তবে যে দল প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছিল সে দলই জয়ী হবে।
  • পয়েন্টঃ যদি কোন খেলোয়াড় মাঠের বাহিরে চলে যায় তাহলে সে আউট হবে। এভাবে একটি দলের সবাই আউট হলে বিপক্ষ দল একটি লোনা(অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট) পাবে। মধ্যরেখা থেকে দম নিয়ে বিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড়কে(একাধিক হতে পারে)স্পর্শ করে এক নিঃশাসে নিরাপদে নিজেদের কোর্টে ফিরে আসতে পারলে, যাদের কে স্পর্শ করবে সে বা তারা কয় জনই আউট হবে। এভাবে যতজন আউট হবে তাদের প্রত্যেকের জন্য এক পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
  • সতর্কতাঃ এক নিঃশাসে স্পষ্ট ভাবে পুণঃপুণঃ কাবাডি বলে ডাক দেওয়াকে "দম নেওয়া" বলে। এই দম মধ্যরেখা থেকে শুরু করতে হবে।বিপক্ষ কোর্টে একসাথে একাধিক আক্রমণকারী যেতে পারবে না। কোন আক্রমণকারী বিপক্ষ দলের কোর্টে দম হারালে এবং বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় তাকে স্পর্শ করতে পারলে সে আক্রমণকারী আউট বলে গণ্য হবে।



৬.  কুতকুতঃ
গ্রামীন কিশোরী-তরুণীদের অন্যতম প্রধান খেলা । বিকালের নরম আলোয় গৃহের  আঙ্গিনায় কৈশর পেরোনো তরুণীরা কুতকুত খেলায় মেতে ওঠে । বর্ষার পরের নরম মাটিতে মাটির ভাঙ্গা তৈজসপত্রের অংশ দিয়ে দাগ কেটে কুতকুতের জন্য ঘর বানানো হয় । বাংলার গ্রামীণ মেয়েরা যে কোনো ঋতুতেই এই খেলা খেলে থাকে । কুতকুত খেলায় ঘর বেচাকেনার বিষয়টি বাণিজ্যের প্রতি গ্রামীণ নারীদের সচেতনতাকে তুলে ধরে । 

এই খেলার সাথে সাথে ছেলে মেয়েদের মুখি উচ্চারিত হয়ঃ 

'"লাইলি লুইলি বাঁশের চোঙ
বাঁশ কাটলে টাকা থোং 
এত টাকা নেবো না
লাইলির বিয়া দিব না
লাইলির আম্মা কাঁন্দে
গলায় রশি বান্দে " 



খেলার নিয়মাবলীঃ 
আয়তক্ষেত্রাকার মোট ৭/৮টি ঘর আঁকা হয় এবং এই ঘরগুলোর শেষ মাথায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির আর একটি ঘর বানানো হয়। প্রথম ঘরে গুটি ফেলে এক পা শূন্যে রেখে এবং দম দিতে দিতে গুটিকে সবগুলো ঘর অতিক্রম করে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে এনে পা নামিয়ে দম ফেলা যায়। তার পর এই ঘর থেকে গুটিকে পা দিয়ে আঘাত করে সব ঘর অতিক্রম করানোর চেষ্টা করা হয়। গুটিটি সব ঘর অতিক্রম না করলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘর থেকে বের হয়ে শূন্যে পা তুলে দম নিতে নিতে তাকে আবার আগের নিয়মে ঘর থেকে বের করে আনতে হয়। খেলোয়াড়রা কপালে গুটি রেখে উপর দিকে তাকিয়ে ৮টা ঘরের দাগে পা না ফেলে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ঘরে যেয়ে আবার প্রথম ঘরে ফেরত আসতে পারলে সে ঘর কেনার যোগ্যতা অর্জন করে। কুতকুত খেলায় যে ঘর কেনা হবে সেই ঘরে পা বা গুটি ফেলা যাবেনা। ঘর কেনার প্রক্রিয়াকালীন সময় খেলোয়াড়ের দাঁত দেখা গেলে ঐ খেলোয়াড়ের খেলা ঐ অবস্থায় মারা যায়। ক্রমান্বয়ে ঘর কিনে শেষ ঘরটি দখল করার মাধ্যমে খেলার নিস্পত্তি হয়।


৭. গোল্লাছুটঃ 
বাংলাদেমের কিশোর-কিশোরীদের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা । গ্রাম ছাড়াও বাংলাদেশের শহরাঞ্চলেও এই খেলা ব্যাপক প্রচলিত । ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল ও খুলনা, পাবনায় এই খেলার প্রচলন সবচেয়ে বেশি ।এই খেলা বাইরে অর্থাৎ স্কুলের মাঠ  অথবা খোলা জায়গায় শিশুরা খেলে থাকে । গোল্লাচুট খেলায় দুটি দল থাকে । মাটিতে এক জায়গায় গর্ত করে তাকে কেন্দ্র কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়, গর্তকে কেন্দ্র করে বৃত্ত তৈরি করে ২৫/৩০ ফুট দুরের অপর দলরে সদস্যদের স্পর্শ করতে হয় । 

নামকরণঃ
বৃত্ত তৈরি করে ঘুরতে হয় বলে এক "গোল্লা" এবং আঞ্চলিক ভাষায় ছুট হলো দৌড়ানো । এভাবেই খেলার নাম হয়েছে গোল্লাছুট । 



খেলার নিয়মাবলীঃ 
খেলার শুরুতে প্রথম দুজন দলপতি নির্ধারণ করা হয় । দলপতিদের বলা হয় "মূল" । দুদলেই সমান সংখ্যক খেলোয়াড় থাকে । দলপতি কিংবা দলের মনোনিত কেউ মাটিতে খোড়া গর্তে পা দিয়ে ধরে রাখে বাকি সদস্যরা পরষ্পর পরষ্পরের হাত ধরে রাখে । তাদের লক্ষ হচ্ছে অন্য দলের সদস্যদের কে স্পর্শ করা। 


৮.   ডাংগুলিঃ
ডাংগুলি বাংলাদেশ ও উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা। সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেরা এই খেলা খেলে। উত্তরভারতে এর নাম গোলি কান্ড । ক্রিকেট আসার পর এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই ম্রীয়মান হয়ে এসেছে। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে খেলাটি ড্যাংবাড়ি, গুটবাড়ি, ট্যামডাং, ভ্যাটাডান্ডা ইত্যাদি নামে পরিচিত।
খেলার উপকরণ দু'টি- একটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা লাঠি (ডাং বা ডাণ্ডা), অপরটি গুলি যা নামে গোল মনে হলেও গোল নয়, আসলে প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা আরেকটি ছোট লাঠি যার দুই প্রান্ত কিছুটা সূঁচালো করা থাকে।
ডাংগুলি বাংলার সর্বাঞ্চলীয় একটি জনপ্রিয় খেলা। প্রধানত কম বয়সের ছেলেরা এটি খেলে থাকে; মেয়েরা সাধারণত ডাংগুলি খেলে না। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি এবং এক বিঘত পরিমাণ একটি শক্ত কাঠি খেলার উপকরণ। প্রথমটিকে ডান্ডা ও দ্বিতীয়টিকে গুলি বা ফুত্তি বলা হয়। প্রথমে খোররলা মাঠে একটি ছোট গর্ত করা হয়। যারা দান পায় তাদের একজন গর্তের ওপর গুলি রেখে ডান্ডা মেরে সেটিকে দূরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা চারিদিকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটিকে লুফে নিতে চায়। তারা সফল হলে ঐ খেলোয়াড় আউট হয়, আর ধরতে না পারলে গর্তের ওপর রাখা ডান্ডা লক্ষ করে ছুড়ে মারতে হয়। ছোঁয়া গেলে সে দান হারায়, আর তা না হলে সে ডান্ডা দিয়ে তুলে গুলিকে আবার দূরে পাঠায়। তারপর গুলি থেকে গর্ত পর্যন্ত ডান্ডা দিয়ে মাপতে থাকে। সাত পর্যন্ত মাপের আঞ্চলিক নাম হলো: বাড়ি, দুড়ি, তেড়ি, চাঘল, চাম্পা, ঝেঁক, মেক। এরূপ সাত মাপে এক ফুল বা গুট এবং সাত ফুলে এক লাল হয়। ভাঙা ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে শেষ হয়, পরের খেলা সেখান থেকে শুরু হয়। বাড়ি, দুড়ি ইত্যাদি প্রতিটি মারের পৃথক পৃথক পদ্ধতি আছে। আউট না হওয়া পর্যন্ত একজন খেলোয়াড় খেলতে পারে, আউট হলে দ্বিতীয় একজন একই পদ্ধতিতে খেলবে। এভাবে সবাই আউট হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পেয়ে খেলা শুরু করে। বস্তুত এ খেলাটি বর্তমান যুগের ক্রিকেটের গ্রাম্য সংস্করণ এবং ব্যাট ও বল ডান্ডা ও গুলির সমতুল্য। এক্ষেত্রেও ক্যাচ হলে অথবা ডান্ডার আঘাত করে আউট করার বিধান আছে।



খেলার নিয়মাবলীঃ 
ডাণ্ডা দিয়ে গুলির সূচালো প্রান্তে মারলে তা লাফিয়ে ওঠে। তার পর সেই লাফানো অবস্থায় তাকে দ্বিতীয় বার ডাণ্ডা দিয়ে মেরে অনেক দূরে পাঠাতে হয়।

 বিপদঃ
 গুলিটি চোখে লেগে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয়বার মারার পর এর তীব্র বেগ ও সূচালো প্রান্তের চোট এই খেলাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ করেছে।


৯. দাড়িয়াবান্ধাঃ 
দাড়িয়াবান্ধা বাংলাদেশের গ্রামীন খেলাধুলর মধ্যে একটি পরিচিত খেলা । এ দেশের সর্বত্র স্থানীয় নিয়ম কানুন অনুযায়ী এ খেলা হয়ে থাকে । প্রায় সব এলাকার শিশুরাই এ খেলাটি খেলতে পছন্দ করে। ছেলে, মেয়ে এমনকি বড়দেরও এ খেলার অংশ নিতে দেখা যায়। 



মাঠ পরিচিতিঃ 
এ খেলার মাঠটি ৫০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট প্রস্থে, মাঝখানে সমান্তরাল ৫০ ফুট লম্বা ও ১ ফুট চওড়া একটি লাইন থাকবে। ১ ফুট অন্তর আড়াআড়ি ৪টি লাইনে সমগ্র কোর্টটি ১০ইঞ্চি/১০টি খোপে ভাগ করা থাকবে। আড়াআড়ি ৬টি লাইন ১ ফুট চওড়া হবে।

খেলার নিয়মাবলীঃ
 প্রত্যেক দলে ৬ জন করে খেলোয়াড় থাকে। টস করে আক্রমণকারী ও প্রতিরক্ষাকারী স্থির করা হয়। ২৫ মিনিট খেলা, ৫ মিনিট বিশ্রাম, পুনরায় ২৫ মিনিট খেলা-এই নিয়মে খেলা চলে। খেলার সময় একজন মারা পড়লে অন্যদলের অর্ধাংশ আক্রমণ করার সুযোগ পাবে। খেলায় একজন রেফারী ৬ বা ১২ জন দাড়িয়া জজ ও ২ জন স্কোরার থাকে। খেলার ফলাফল অমীমাংসিত থাকলে ১০-১-১০ মিনিট পুনরায় খেলে খেলার ফলাফল নির্ধারিত করা যায়।

 প্রথমে মাটিতে দাগ কেটে ঘর তৈরি করা হয়। ঘর দেখতে অনেকটা ব্যাডমিন্টনের কোর্টের মতো। দুই দলে চার-পাঁচজন করে খেলোয়াড় হলে জমে। কম হলেও দুজন করে খেলোয়াড় লাগবেই। সমতলভূমিতে কোদাল দিয়ে দাগ কেটে ঘর কাটা যায়। বর্গাকার একটি ঘরে সামনে-পেছনে সমান দূরত্বে দুটি করে দাগ কাটতে হয়। এ দুই দাগের মাঝে এক হাত পরিমাণ জায়গা রাখতে হয়। এগুলোকে বলে আড়া কোর্ট। দুটি আড়া কোর্ট জোড়া দিয়ে মাঝখানে একটি কোর্ট তৈরি করা হয়। মাঝখানের এই কোর্টকে বলে 'খাড়া কোর্ট'। খেলোয়াড় যত বেশি হবে, কোর্টের সংখ্যাও তত বাড়বে। প্রতিটি আড়া কোর্টে একজন করে খেলোয়াড় দাঁড়ায়। এখানেই দাঁড়িয়ে অন্য দলের খেলোয়াড়দের ঘরের ভেতর ঢুকতে বাধা দেয়। কোর্টের ওপর বা ঘরের ভেতর অন্য দলের খেলোয়াড়কে ছুঁতে পারলে সে মারা পড়ে। সামনের খেলোয়াড় তার পেছনের খাড়া কোর্ট ব্যবহার করতে পারে। যে দল খেলার সুযোগ পায়, তারা সামনের ঘর দিয়ে ঢুকে পেছনের ঘর দিয়ে বেরোতে থাকে। সব ঘর পেরোনোর পর আবার পেছনের ঘর থেকে সামনে আসে। কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য দলের খেলোয়াড়দের ছোঁয়া বাঁচিয়ে সবাই ফিরে আসতে পারলে গেম হয়। যারা কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের খেলোয়াড়দের কারো পা যদি দাগে পড়ে তবে তারা ঘর ছেড়ে দেয়। অন্য দল ঘরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। এভাবে অনেক সময় ধরে খেলাটি খেলা যায়। দাড়িয়াবান্ধার কোর্টের সঠিক কোনো মাপ নেই। একজন খেলোয়াড় দৌড়ে কতটুকু ঘর সামলাতে পারবে, তার ওপর ভিত্তি করে ঘর কাটা হয়। তবে সব ঘরের গঠন একই থাকে।

২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

এগুলো সব এখন স্মৃতি

Bangladesh Lathi-Lori Association বলেছেন...

লাঠিখেলার গোড়াপত্তন হয় লাঠিয়ালদের রাজধানী মাগুরা জেলা সদরের আলোকদিয়া পীরসাহেবের দরবারে। পীরের দরবারে বিখ্যাত উস্তাদ সড়কিরাজ উস্তাদ আব্দুল সর্দারের হাতে ১৮'শ শতাব্দিতে বঙ্গদেশে লাঠিখেলার পরিপূর্ণতা পায়। ২০০৯ সাল হতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠি-লড়ি খেলাকে জাতীয়করণ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় "বাংলাদেশ লাঠি-লড়ি এসোসিয়েশন"। মাগুরা জেলার আলোকদিয়া দরবারের বর্তমান পীরজাদা শাহ সৈয়দ মো. ফরহাদ হোসেনকে প্রেসিডেন্ট করে "বাংলাদেশ লাঠি-লড়ি এসোসিয়েশন" আওতায় সারাদেশের খেলোয়াড়দের সংগঠিত করার কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে ৫০টি জেলার কমিটি গঠন চলমান।

বাংলাদেশ লাঠি-লড়ি এসোসিয়েশন
কেন্দ্রীয় দপ্তর
রমনা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
01759-769897
blbmagura1933@gmail.com